নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মাওলানা আল আমিনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ মামলায় ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রোববার (৭ জুলাই) সকালে পুলিশ আল আমিনের ১০ দিনের রিমা- আবেদন করলে সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌণ নিপীড়নের অভিযোগে ৪ জুলাই সকালে ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা থেকে মাওলানা আলআমিন আটক করে র্যাব-১১। এসময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের মোবাইল ও কম্পিউটার থেকে একাধিক অশ্লীল ভিডিও জব্দ করে র্যাব। পরে এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হয়। ৫ দিনের রিমাণ্ড শেষে আলআমিনকে আদালতে আনলে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় রিমা- শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মাওলানা আল আমিন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া এলাকার রেনু মিয়ার ছেলে। বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। একই সঙ্গে তিনি ফতুল্লা এলাকার একটি মসজিদের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব করছিলেন।
তাকে আটকের পর র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্কুল শিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনাটির প্রচারিত বিভিন্ন নিউজ ও ভিডিও আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজে আপলোড করেছিলাম। এই নিউজ দেখে স্থানীয় একজন মহিলা যখন ফেসবুকে দেখছিলেন, তখন তার তৃতীয় শ্রেণী পড়–য়া মেয়ে এটি দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ‘স্কুলের ওই শিক্ষকের শাস্তি হলে আমাদের হুজুরের কেন শাস্তি হবে না? আমাদের হুজুরও তো আমাদের সাথে এমন করে। পরে শিশুটি তার মাকে বিস্তারিত জানালে শিশুটির মা র্যাব অফিসে এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একাধিক ছাত্রীকে তার বাসায় পড়তে গেলে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে।
তিনি জানান, এরপর র্যাব এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু ঐ শিক্ষার্থী নয় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর যাবৎ ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পর্যন্ত ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানিও করেছেন।
তিনি আরো জানান, অধ্যক্ষ আল আমিন মাদ্রাসার একটি রুমে তার পরিবার নিয়ে থাকতো এবং একটি অফিস কক্ষসহ কয়েকটি ক্লাস রুমে ছেলে মেয়েদেরকে পড়াতো। তার স্ত্রী একজন পর্দানশীল মহিলা, সে ভিতরের দিকে থাকতো, সামনে তেমন একটা আসতো না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় পড়তে আসা ছাত্রীদেরকে ডেকে তার রুম ঝাড়– দেওয়া ও বিভিন্ন কৌশলে এনে রুমের ভেতর তাদেরকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।
র্যাব-১১’র অধিনায়ক জানান, এ সকল ঘটনার প্রমাণস্বরুপ আমরা তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার তল্লাশী করে প্রচুর পর্নোগ্রাফী ভিডিও পেয়েছি। কিছু কিছু পর্নোগ্রাফী সে নিজেও তৈরী করেছে। সে তার কাছ পড়তে আসা কোন ছাত্রীর ছবির মাথার অংশ পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সাথে সংযুক্ত করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক অধ্যক্ষ আল আমিন ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তার দাবি তিনি আগে এমনটা ছিলেন না শয়তানের প্ররোচনায় পরে সে এমনটা করতেন।