নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নির্বাচনের বছরে আপনি এ্যাকটিভ হয়ে যান। আপনার এই এ্যাকটিভ হওয়ার হুঙ্কার, দুঙ্কার বন্ধ করেন। শেখ হাসিনার জন্য কাজ করেন, জন কল্যাণে কাজ করেন। অন্যথায় আপনার অবস্থান এখনই কিন্তু নাই, আরও থাকবে না। এই শহরের মানুষকে এত বেশি অত্যাচার করা হয়েছে, নেতৃবৃন্দকে করা হয়েছে, কর্মীদের করা হয়েছে, যা বলে বুঝানোর ভাষা নাই।
আপনি টাকার বিনিময়ে মানুষকে দলে নিয়ে আসেন, আবার টাকার বিনিময়ে মানুষকে ক্ষতি করেন। এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকুন। আপনার ভয়ে অনেকে আমাদের সঙ্গে এসে কাজ করতে সাহস পায় না। আমরা নিশ্চুপে কাজ করে যাচ্ছি। সেই কাজ গুলো করার সুযোগ দেন।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের উদ্যোগে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মেয়র আইভী বলেন, আপনি প্যাট্রোনাইজ (পৃষ্ঠপোষকতা) করেন জামায়াত-বিএনপিকে। আপনি প্যাটোনাইস করেন হেফাজতের ফেরদৌসকে। আপনি ফেরদৌসকে কাজে লাগাচ্ছেন এখন জাহাঙ্গির আলমের বিরুদ্ধে। একজন রানিং সহসভাপতি বিএনপির। তাকে ধরে এনে কোন কারণে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলেন? আপনার লজ্জা করে না। আপনিই না বারবার বিএনপির বিপক্ষে কথা বলেন। ইউনিয়ন পরিষদের সব গুলো চেয়ারম্যান আপনি বিএনপির লোক বানিয়ে রেখেছেন। সেন্টু কি কোন দিন জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বলবে? গত পরশু যে আপনি এত বড় মিছিল করলেন? কৈ আপনার মিছিলে কেন সেন্টু আসলো না। কেন ওই খানে দাঁড়িয়ে জয় বাংলা জয়, বঙ্গবন্ধু বললো না। বঙ্গবন্ধুর গুনগান কেন করলো না? আপনি টাকার বিনিময়ে মানুষকে দলে নিয়ে আসেন এবং টাকার বিনিময়ে অনেকের ক্ষতি করে ফেলেন। এই কাজগুলো থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করতে চাই, আপনার ভয়ে অনেকেই আমাদের সাথে এসে কাজ করতে চায় না। দলের মধ্যে আপনি সবচেয়ে বেশি বিবেধ তৈরি করেন। আপনি এই সমস্ত-সব বন্ধ করেন, না হলে আপনার পরিনতি খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
আইভী আরও বলেন, ‘ওয়ান/ইলেভেনে যখন নেত্রীকে গ্রেপ্তার করলো তখন তো আমি কোনো বড় নেতাকে দেখিনি এই শহরে। আজ যারা হুংকার দেয় দুঃসময় আসছে, এই করে ফেলবে, সেই করে ফেলবে। তো তখন কোথায় ছিলেন ভাই-ব্রাদাররা? এত নেতাকর্মী কই ছিলেন? এত বড় বড় কথা কন। আজ যারা আশপাশে, এই গুটিকয়েকজনেই তো মিছিল-মিটিং করলাম দুঃসময়ে। চিল্লাচিল্লি করলাম। আমার ছোট ভাই উজ্জল এখনও মামলার আসামী।
এ সময় শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে আইভী আরও বলেন, আবার দল ক্ষমতায় এলে এই আমাদেরেই একটা গ্রুপ দ্বারা এমন ভাবে নির্যাতিত হই, মামলা-হামলার শিকার হতে হয়। হকার নয়, কতিপয় নেতৃবৃন্দ এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে, আমার উপর হামলা হইলো। সেই হামলার কারণে মামলা করছি, ৯ জনের বিরুদ্ধে। তার জন্য নাকি আমি একদম মহা ভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি। এই রকম মামলা করলে আপনাদের বিরুদ্ধে এই আলোচনা থেকেই ১০, ২০ কিংবা ৫০টা করে মামলা করার কথা ছিল।
আপনার ভাগ্য ভালো আপনি বেঁচে গেছেন, আমি মামলা মোকদ্দমা করি না বলে। আমরা দলকে সংগঠিত করি। দলের কাজ করি, মানুষের কল্যাণে কাজ করি। জন কল্যাণে কাজ করি। এ সকল কাজ করতে গিয়ে আপনার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সময় পাই না। আপনার বিরুদ্ধে আমাদের মাথা ঘামানোর সময় নাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত প্রমুখ।