নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জে ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে (শুক্রবার) বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপি এ উৎসবের।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রনা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরত কালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মরণ ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
এদিকে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে নারায়ণগঞ্জজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ডপ।
চাষাঢ়া রামকৃষ্ণ মিশনের পুজার নিঘন্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মন্ডপ এলাকা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে।
সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পুজা শুরু সকাল ৬টা ৩০মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপি এ উৎসবের।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আগামী মঙ্গলবার দশমীতে শহরের বিভিন্ন মন্দির থেকে বের করা হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা চাষাঢ়া গোল চত্বর, গলাচিপা মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেট, ২নং রেলগেট দিয়ে ১নং রেলগেট হয়ে ৫নং বিআইডব্লিউটির ঘাট শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন জানিয়েছেন, এবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ২২৪টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পূজা মন্ডপের নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। আমরা ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছি।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়াও শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের মন্দির ও মন্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছারক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।