নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ : পাকিস্তানের মদদে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদী শক্তি ধ্বংস হোক এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে নগরীতে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৪ আগষ্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিমউদ্দিন মাষ্টারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায়
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রধান বক্তা বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন আহমেদ।
এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রদীপ দাস, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, মহানগর তাঁতী লীগের আহ্বায়ক সাহেদ চৌধুরী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সোনারগাঁ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক এড. প্রদীপ ভৌমিক, বন্দর থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর দাস, সাধারন সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাসসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। সে সময় আমরা বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি। ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। যার ফলে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁর নির্দেশিত পথে বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পর খুনি মোস্তাক জিয়া থেমে থাকেননি। তারা জনগণের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টি করেছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নির্যাতন নিপিড়ণের শিকার হতে হয়েছিল।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর হয়েছে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার বিচার করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছিল তার জন্য তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনো ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তানি সেই পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা এখনও সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটন করার সর্বাত্মক চেষ্টা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে হবে। পাকিস্তানকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তানি অপশক্তি এখনো নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে খুলনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি জবর দখল করার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করব সকল অপশক্তি বিনাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন।
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা ৭৫ এর ১৫ আগস্টে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেছিলো। তারা চেয়েছিল ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উসকে দিয়ে এ দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করে দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরের দিকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানাই এবং সকল অপশক্তির বিনাশ কামনা করি। বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক, ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করুক এই কামনা করি।