নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ রিপোর্ট
কথায় আছে, প্রেম কখন যে কার সাথে হয়ে যায় বা যাবে, তা জানে না কেউ। হঠাৎ বৃষ্টির মতো প্রেম। হুট করে এসে যখন তখন ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তাই তো কবি বলেছেন, প্রেমের ক্ষেত্রে কখনো প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় নেই, প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। আফরিন ও মেহেদীর ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটিই হয়েছে। তা না হলে সন্তান-সংসার রেখে দুজন মানুষ কী করে নতুন জীবনের সন্ধানে ঘর বাঁধতে পারে? যদি তাদের এই প্রমে সমাজের দৃষ্টিতে পরকীয়া। কিন্তু তারা কী কখনো সেভাবে দেখেছে? হয়তো না। তারা হয়তো প্রেমকে কেবল প্রেমের দৃষ্টিতেই দেখেছে। আবেগকে প্রশ্রয় একে অপরকে ভাসিয়েছেন, ভেসেছেন প্রেমের ভেলায়। আফরিন আক্তার রানী এবং মেহেদী হাসান, তাদের দু’জনেরই সংসার ছিলো, সন্তানও ছিলো। এরপরও তারা একে অপরের প্রেমে মজে যান। গোপনে গোপনে বুকের ভেতর স্বপ্ন পুষতে থাকেন- ঘর বাঁধার। মেহেদী হাসান তার স্ত্রী এবং আফরিন তার স্বামীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রেম। একটা সময়ে তারা দু’জনই ঘর-সংসার ও সন্তানের মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন নতুন ঘরের সন্ধানে। গত দু’বছর আগে এই পরকীয়া প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে নতুন করে ঘর বাঁধে তারা দুজন। তাদের নতুন সংসার হয় ফতুল্লার চাঁদনী হাউজিংয়ের ফারুক মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। এখানেই ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন এই দুজন। এখন আর তারা প্রেমিক প্রেমিকা নন; বিধি মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী। তাদের দুই বছরের সংসারকে আলোকিত করে জন্ম নেয় এক শিশু সন্তান। তার বয়স এখন পাঁচ মাস। আর এই পাঁচ মাস বয়সে সে হারালো তার মা’কে। বাবা আছেন, কিন্তু নেই। অর্থাৎ কিছু বুঝে ওঠার বয়স হওয়ার পূর্বেই সে তার বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছেন। আর আফরিন যে স্বপ্ন নিয়ে মেহেদি হাসানের হাত ধরে নতুন সংসার পেতেছিলেন তার সে আশা সহসাই ফুরিয়ে গেলো মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। যাকে ভালোবেসে সব ছেড়ে ঘর বাঁধলো সেই প্রিয়তম স্বামীর হাতেই খুন হবেন আফরিন! এমনটি হয়তো কল্পনাতেও কখনো ভাবেনি সে। কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতায় সেই প্রিয়তমর হাতেই খুন হলেন আফরিন। রেখে গেলে পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে। বাবা-মা হারা এই সন্তানটিরই বা কী হবে এখন? তার কি দোষ ছিলো? গতকাল শুক্রবার ভোরে ফতুল্লার এনায়েত নগরের চাঁদনী হাউজিংয়ে ফারুকের বাড়ির ২য় তলায় ঘটে এ ঘটনা। ঘটনার পরপরই ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করেন আফরিন আক্তারের ‘ঘাতক’ স্বামী মেহেদি হাসান। নিহত আফরিন আক্তার রানী নাটোর জেলার বাঘাদিপাড়ার সরদীয়া এলাকার আব্দুর রহিমের মেয়ে। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মজিবুর রহমান। তিনি জানান, “দুপুরের দিকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।” এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন-উল-আবেদ নিহত আফরিন আক্তারের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, “তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আফরিনের গলায় গামছা পেচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে তারই স্বামী মেহেদী হাসান। এতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরে মেহেদী হাসান নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসর্মপণ করেন।” তিনি আরও জানান, “মেহেদী হাসান ও আফরিন আক্তার রানীর এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তারা উভয়েই পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ছিলো। পরে তারা উভয়েই আগের ঘর-সংসার-সন্তান ছেড়ে নিজেদের ইচ্ছেতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর প্রায় সময় পূর্বের সংসার, সন্তান নিয়ে তাদের মাঝে তর্ক-বিতর্ক হতো।”