নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, ‘আমি সেলিম ওসমান এমন কেউ না যে আমাকে একেবারে সংসদ সদস্য হতেই হবে। একটা বিশাল বড় বিপদে পড়ে গেছিলাম। আমার ভাইটা হঠাৎ করে মারা যায়। যার পর থেকে এই এলাকায় একটা ক্রাইসিস দেখা যায়। আমি আশা করি সামনের দিনগুলিতে আমরা দল মত নির্বিশেষে একসাথে কাজ করবো।’
রবিবার ২৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় শহরের আমলাপাড়ার সর্বস্তরের এলাকাবাসীর কর্তৃক আয়োজিত ব্যানারে আমলাপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কালকেও প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে বলেছেন, কেউ বেকার থাকবে না, কেউ গরিব থাকবে না। আমাদের এখন একটাই কাজ। আগামী ৫ বছরের সরকার অবশ্যই শেখ হাসিনার সরকার হতে হবে। শেখ হাসিনাকে যদি প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারি। তবে আজকে এখানে যা আশার কথা হয়েছে, আপনাদের যা প্রত্যাশা। আল্লাহ চাইলে সবটাই পূরণ হবে। এ সময়টায় শুধু একটা কথাই বলবো, ‘এলাকায় ভোট দিতে গিয়ে যেনো কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। কেউ যেনো বিশৃঙ্খলার চেষ্টা না করতে পারে।’
এসময় একই আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী এসএম আকরামকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার সাথে যিনি নির্বাচন করছেন তিনি এক সময় আওয়ামীলীগের জেলা প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেখান থেকে টিকেট নিয়ে নৌকার এমপিও হয়েছিলেন, তারপর তিনি হঠাৎ করেই নৌকাকে ছেড়ে দিলেন। তার নৌকা ডুবে গেলো। ডুবে গেলো এই কারণে যে তাকে নিয়ে জনগণের অসন্তোষ ছিল যে তিনি অনেকটা সময় উত্তরা ক্লাবে জুয়ার টেবিলে থাকতেন। তারপর তিনি একটা আনারস কিনে এসে আমার সাথে উপ নির্বাচন করলেন। এতো বেশি ফরমালিন দিছেন সেটা পঁচে গেছে। এবার গিয়ে এই আওয়ামীলীগের নেতা ডক্টর কামাল হোসেনের লেজ ধরে কোনো রকমে গিয়ে ধানের শীষ নিলেন। এটা কখনও খালেদা জিয়ার ধানের শীষ নয়। এটা চিটা ধান। সে জন্যেই বিএনপির অনেক নেতা আমাকে সাহায্য করেছেন। এরপরও আমি অনেক দিন নির্বাচন করবো বলতে পারিনি। আমি জানি নারায়ণগঞ্জের বিএনপিকে কুরবানী দিতে হয়। এটা আমি বলি নাই। আপনাদের এলাকার কাউন্সিলরের বড় ভাই তৈমূর সাহেবই বলেছেন এই কথা। আর এবার এতদিন যারা বিএনপি করেছেন তাদের দুজনকেই কুরবানী করে আকরামকে ধানের শীষ দেয়া হলো। বেঈমান মানে বেঈমান, বেঈমান চিরকালই বেঈমান। তাই অনুরোধ যাকেই ভোট দেন একটু হিসেব করে দিবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও কিন্তু সিওর না তারা (বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচন করবে। যে কোন সময় পালাতে পারে। পালাতে দিয়েন না। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকতেই পারে। ভয় পাইয়েন না। আর কী আছে বলেন! থাকেন না শেষ পর্যন্ত। আপনি মান সম্মান অর্জন করতে পেরেছেন নাকি পারেনি একটা পরীক্ষা হোক না? দরকার হলে আমরা দুনিয়ার ভিতরেই পুলসিরাত পার হবো। এতো ভয় কেনো। সেলিম ওসমানের থাপ্পা এতো ভয় লাগে! এটা মুক্তিযোদ্ধার থাপ্পা। যেখানেই গন্ধ পাবো দেশকে অরাজকতার দিকে নেয়া হচ্ছে সেখানেই থাপ্পা দিবো। আপনি আচরন বিধির কথা বলেন! থাপ্পাটা আগে খান। তারপর আচরণ বিধির কথা বলেন।’
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আমার নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলতে আসিনি। তাদের সাথেতো প্রতিদিনই দেখা হয়। আমি এসেছি এই এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে। এ সময় তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মঞ্চে উঠে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং অতীত ভুল সম্পর্কে বলার জন্য মঞ্চে আহবান জানান।
এসময় একজন মহিলা বলেন, আপনি বিভিন্ন জায়গায় স্কুল করেছেন, স্কুলের নতুন ভবন করেছেন আামাদের অনুরোধ নারায়ণগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও উন্নত হোক। সেই সাথে তিনি এলাকার প্রতিটি যুবকের জন্য চাকরির ব্যবস্থার জন্য সেলিম ওসমানের প্রতি অনুরোধ রাখেন।
পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান বলেন, যেকোনো ভালো কাজের জন্য সবার আগে যা দরকার তা হলো সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আপনারা একসাথে যদি কোনো কাজে নামেন দেখবেন এর জন্য সেলিম ওসমানর দরকার নেই। আপনারা সবাই যদি একত্রে চান আমি আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের সবার দাবি এই স্কুল বড় করতে হবে। আমিও বলি এই স্কুল বড় হওয়া দরকার, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হওয়া দরকার। ইতিমধ্যে আমার ৭টি ইউনিয়নে ৭টি স্কুল করতে পেরেছি। উন্নত মানের আরো স্কুল করা দরকার। খানপুর হাসপাতালকে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কদম রসুল কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। বিনামূল্যে ফেরি পারাপারের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন এই উন্নয়ন যেনো অব্যাহত থাকে।
তিনি আমি ভোট চাইবো না। আপনার ভোট আপনি দেবেন যাকে মনে চায় তাকে দেবেন। তবে আর যাই করেন চিটাওয়ালা ধানের শীষ নিয়ে আসবেন না। আপনার জানেন তিনি একসময় ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি। এরপর নির্বাচন করেন আনারস মার্কা নিয়ে আর এবার এসেছেন চিটাওয়ালা ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচন করতে। এখানে যারা আছেন তারা অন্তত জানেন এই ধানের শীষ খালেদা জিয়ার ধানের শীষ নয়। সেলিম ওসমান এলকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, আপনারা শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন আমি হারাম না খাই, হারাম না খাওয়াই।
তিনি আরো বলেন, পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য যারা ঘুরছো তাদের বলছি বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজরে চাকরির জন্য যে জিনিসটি দরকার তা হলো দক্ষতা। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যদি প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষন নিতে পারো তাহলে দেখবে চাকরি আর অধরা থাকবে না। তোমাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিকেএমইএ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে তা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা হলো চকারিই করতে হবে এমন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দরকার হলে ব্যবসা শুরু করো। আমি আমার জীবনে মুরগি বিক্রি করেছি, মাছ বিক্রি করেছি, বাসের ড্রাইভারি করেছি। সবথেকে বড় কথা হলো নিজের উন্নতির জন্য চোখের লজ্জা তাড়াতে হবে। দেখবে উন্নতি কেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দেশে কোনো বেকার থাকবে না। আর তার জন্য দরকার শেখ হাসিনার সরকার।
এসময় এক শিক্ষার্থী মঞ্চে এসে সেলিম ওসমানের মা নাগিনা জোহার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, নারায়ণগঞ্জে জন্মে আমি গর্বিত। কারণ এটি এমন মায়ের স্থান যিনি তিনটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন যারা প্রত্যেকে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো তার জীবিত দুই সন্তান সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ক্লথা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি খবির উদ্দিন আহম্মেদ, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রবিউল হোসেন, সদস্য শিখণ সরকার শিপন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রফেসর শিরীন বেগম, জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি আঞ্জুমান আরা ভূইয়া, সিটি কর্পোরেশনের নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নী, যুবলীগ নেতা এহসানুল হাসান নিপু, শাহ ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ সহ আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি সহ মহাজোটের নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।