নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য যেদিন থেকে চিরকালের জন্য বইতে শুরু করলো বাঙালির বুকে, মহান সেই স্বাধীনতা দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী আজ। স্বাধীনতার এই দিনে বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীর সন্তানদের। স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও দিনটি পালনের লক্ষ্যে দিনভর নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ভোর ৫:৫৭ মিনিটে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শহরের চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করবেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া। এ সময় ৩১ বার তোপধ্বনী করা হবে। এরপর দিনব্যাপী নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। দিনটি উপলক্ষে বাড়তি নিরপত্তা জোড়দারের কথা জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের মুখপাত্র পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-২) সাজ্জাদ রোমন স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানান, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস কিংবা ২১ ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা দিবসসহ যে কোন বিশেষ দিনগুলোতে আমরা সব সময়ই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করে থাকি। বরাবরের মতো এবারেও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। আমাদের এসপি মহোদয়ের নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জের জনগনকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে সদা তৎপর রয়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। প্রত্যাশা করছি নারায়ণগঞ্জবাসী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপণ করতে পারবে এই মহান দিনটিকে।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপনে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নেয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভার ৫:৫৭ মিনিটে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শহরের চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, ৩১ বার তোপধ্বনী, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল আটটায় ওসমানী পৌর ষ্টেডিয়ামে সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে, দুপুর সাড়ে বাটোয় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, দুপুর একটায় নারায়ণগঞ্জের সকল হাসপাতাল, শিশু সদন, এতিমখানা, সরকারী আশ্রয়কেন্দ্র ও জেলা কারাগারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, বিকেল তিনটায় নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহিলাদের অংশগ্রহনে ক্রীড়ানুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জের সকল সিনেমা হলে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পূর্ণ দৈর্ঘ ছায়াছবি প্রদর্শণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, বিকেল সাড়ে চারটায় ওসমানী ষ্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন একাদশ বনাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা একাদশ প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনের তাৎপর্য এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জের সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনেও মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপণের জন্য নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর পেছনে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ২৬ মার্চ। স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে বাঙালিরা। সেই পটভূমিতে বায়ান্নতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধিকারের চেতনার উন্মেষ ঘটে পূর্ব বাংলায়। ধাপে ধাপে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
সামরিক শাসন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফার আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ নানা ঘঁনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসে একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের আহ্বানে জেগে ওঠে নিরীহ বাঙালি। যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে তারা শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় চালায় বর্বর গণহত্যা। ওই রাতেই গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।