নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
প্রয়াত বাসদ নেতা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুজাউদ্দিন বাদল স্মরণে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকাল ৪ টায় চাষাঢ়াস্থ শহীদ মিনারে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে এবং বাসদ নেতা আবু নাঈম খান বিপ্লবের সঞ্চালনায় শোকসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম জোটের কেন্দ্রীয় অন্যতম শীর্ষ নেতা কমরেড খালেকুজ্জামান। আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এড. জিয়াউল ইসলাম কাজল, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হাফিজুর রহমান, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউান্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, প্রয়াত সুজাউদ্দিন আহমেদ বাদলের বড় ভাই ইমতিয়াজউদ্দিন আহমেদ তারেক ও ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জুলু।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, কমরেড সুজাউদ্দিন বাদল আশির দশকের প্রারম্ভে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ছাত্রফ্রন্টে যুক্ত ছিলেন। তিনি তৎকালীন এরশাদ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আমৃত্যু তিনি সকল প্রকার শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
তিনি ছিলেন সৎ, সদালাপি, বন্ধুবৎসল, পরোপকারী। ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক টানাপোড়নেও কখনো এই গুনাবলীর ব্যত্যয় ঘটেনি। শহরের বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও এ নিয়ে তার কোন হামবড়া ভাব ছিল না।
বাসদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি এসব গুনাবলী অর্জন করেছেন। যে স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে তিনি রাজপথে সোচ্চার ছিলেন, সেই স্বৈরতন্ত্র ভিন্ন ধারায় আজও প্রতিষ্ঠিত।
গণতন্ত্র নির্বাসিত, এমনকি নির্বাচনী ব্যবস্থ্রাও ভেঙ্গে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন, দুদক, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আজ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়নের ডামাডোলে কোটি কোটি শোষিত গরীব মানুষের কান্না চাপা পড়ে যাচ্ছে। সুজাউদ্দিন বাদল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ৪৮ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করে শাসকগোষ্ঠী রাজাকারের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা, সাম্যের চেতনা, শোষণমুক্ত সমাজ তথা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের চেতনা। কমরেড বাদল সেই চেতনা ধারণ করে বাসদের নেতৃত্বে শোষণমুক্ত সমাজ তথা সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের সংগ্রামে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। তার এই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে আমরা রাজপথে লড়াই করে যাবো এই আমাদের শপথ।
বক্তারা বলেন, সুজাউদ্দিন বাদল চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন সংগীতজ্ঞ মান্না দের ভক্ত। সেজন্য অনেকে তাকে মান্না বাদল বলেও ডাকতো।
তিনি অপসংস্কৃতি, বুর্জোয়া ভোগবাদী সংস্কৃতি, ধর্মীয় কূপম-ুকতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শোষিত নিপীড়িত বঞ্চিত জনগণের পক্ষে গণসংগীত গাইতেন। তার এই স্বপ্ন আমাদের আগামীর পথচলা।
উল্লেখ্য, সুজাউদ্দিন আহমেদ বাদল শুক্রবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে নগরীর বেপারীপাড়ার বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয় । পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া ) নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।