নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কোন বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন এলাকায় ভোগরা -জয়দেবপুর- মদনপুর (ঢাকা-বাইপাস) সড়কের পিপিপির আওতায় নির্মাণাধীন ছয় লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, দুই সিটিতে মেয়র পদে বিজয়ী হতে পারবেন এমন জনপ্রিয় প্রার্থীকেই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিভিন্ন সংস্থা ও তার নিজস্ব টিম দিয়ে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জরিপ করেছে জনমত যাচাই করেছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহায়তা করা হবে। সরকার এবং সরকারি দল এই দুই সিটির নির্বাচনে কোন হস্তক্ষেপ করবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের নির্মাণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে । মধ্যবর্তী সময়ে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় নির্মাণ কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলেছিল। তবে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি ইতিমধ্যে সমাধাণ হওয়ায় নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিচুয়ান রোড এন্ড ব্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশন লিমিটেড, দেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড যৌথভাবে ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য। পিপিপির আওতায় ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজ আগামী তিন বছরের মধ্যেই শেষ হবে।
নির্মাণ ব্যয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২শ’ ২৩ কোটি টাকা অর্থমন্ত্রণালয় অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দিবে। বাকি টাকা পিপিপির আওতায় চুক্তিপত্র বদ্ধ বিদেশি দুইটি কোম্পানী বহন করবে । জমি অধিগ্রহণ ও সার্ভিস চার্জ হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয় করবেন। বাকি ৩হাজার ২শ’ ৭৬ কোটি টাকা বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন।
২০২২ সালের মধ্যে ঢাকা-বাইপাস সড়কের ৬ লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সড়ক-মহাসড়কে দূর্ঘটনা ও প্রাণহানীর কারণ হিসেবে জনগণের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এজন্য তিনি সবাইকে সড়কে চলাচলের জন্য ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের হেলমেট ব্যবহারের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, উঠতি বয়সের তরুণরা ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় নছিমন-করিমন-ভটভটি ও থ্রি হুইলার সিএনজি নিষিদ্ধ করা হলেও অবাধে চলাচল করছে। নেতারা তাদের ভোটের জন্য এই পরিবহন গুলো ব্যবহারে উৎসাহিত করছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, এই পরিবহনগুলোই সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বিগত দিনে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমলেও শুধুমাত্র ট্রাফিক আইন মেনে না চলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক বেড়েছে। এজন্য তিনি নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জাওয়াদ আলম, এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সবুজ উদ্দিন খান, চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমিংসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বক্তব্য মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পটির নামফলক উন্মোচন করে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।