স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেছেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ এখনো নির্মূল হয়নি। তারা আবারো মাথাচারা দিয়ে উঠার পায়তারা করছে। বিষাক্ত সাপের মতো ফণা তুলে ছোবল দিয়ে আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে তারা উঠেপরে লেগেছে। বর্তমাস সরকারের উন্নয়নের ধারাকে ব্যহত করতে সেই কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যহত রয়েছে। তাই আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কারো উস্কানীতে কান দেয়া যাবে না। আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজায় প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে পেলে দেহ তল্লাশীর ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র পুলিশের উপর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে প্রতিটি মন্ডপ কতৃপক্ষকে নিজ উদ্যোগে ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার ২৮ আগষ্ট সকালে শহরের রাম সীতা মন্দিরে এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এড. খোকন সাহা আরো বলেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নের জন্যে ১২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা কোন সরকার করেনি। নারায়ণগঞ্জের দুই সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান ও একেএম শামীম ওসমানও সংখ্যালঘুদের পাশে সব সময় থাকেন। আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজায় কেন্দ্রেীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে যে ২৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মেনে পূজা পালন করতে হবে। কারন বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে আমি প্রচন্ড ভয়ে আছি কারন পূজায় অতিরিক্ত লোক সমাগমের কারনে স্বাস্থ্য বিথি লঙ্ঘণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এতে করে মহামারি পরিস্থিতি আরো খারাপ যাতে না হয়ে যায় সে লক্ষ্যে আমাদের সকলকে এবার উৎসবের অংশটিকে পরিত্যাগ করে সাত্তিক পূজার আয়োজন করতে হবে।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন মন্দির কমিটির প্রতিনিধিদের বক্তব্য ও তাদের সমস্যাগুলোর কথা শুনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন তার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, এবার পূজা হবে, উৎসব হবে না। শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জের মন্ডপগুলোতে যে সকল সমস্যা রয়েছে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে প্রতি বছর দূর্গা মন্ডপের জন্যে সাংসদ সেলিম ওসমানের দেয়া অনুদান যাতে এবারো অব্যহত থাকে সে বিষয়ে আমি ইতিমধ্যেই তার সাথে আলাপ করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন তিনি চেষ্টা করবেন। তারপরও আপনাদের যদি আরো কোন সমস্যা থাকে আমি ভাই হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে তা সমাধানের চেষ্টা করবো। আপনারা সবাই কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্যে সকলে সচেতন থাকবেন এবং অতিরিক্ত জনসমাগত পরিহার করবেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে সকলে দূর্গা পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নিন। অনেক মন্দির কতৃপক্ষ শংকায় ছিলেন এবারে পূজা অনুষ্ঠিত হবে কিনা। আমাদের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে আলোচনা করে পূজা আয়োজনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তবে সেই সাথে ২৬টি নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমাদের সকলকে সে নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। পূজা আয়োজনের এখনো প্রায় দুই মাস বাকী রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কি রূপ ধারন করে সেদিকে খেয়াল রেখে নির্দেশনাগুলো আরো কঠোর হতে পারে অথবা শিথিলও হতে পারে। কারন পূজা আয়োজনের কারনে করোনা আরো বেশী মাত্রায় ছড়িয়েছে- এ অপবাদ যেনো শুনতে না হয়।
তিনি আরো বলেন, মন্ডপগুলোতে বাদ্য বাজনার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, কোন প্রকার অতিরিক্ত লাইটিং থাকবে না। প্রতিটি মন্ডপে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধুমাত্র ধর্মীয় অচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজা পালন করতে হবে। প্রতিমার আয়তন যাতে কোনভাবেই তিন ফুটের বেশী না হয় যাতে করে ৫জনে মিলে উঠিয়ে নেয়া যায়। প্রতিটি মন্ডপে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। আমাদের মন্ডপগুলোতে মাননীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের দেয়া বরাদ্দ যাতে পেতে পারে আমারা সে চেষ্টা অবশ্যই করবো। সেই সাথে জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি দিপক সাহা প্রতি বছর যে অনুদান দিয়ে থাকেন তাও অব্যহত থাকবে। আমরা আমাদের এমপি মহোদয় একেএম সেলিম ওসমান ও একেএম শামীম ওসমানের প্রতি পূজা পরিষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনারা সবাই তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্যে দোয়া করবেন। আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে আর সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কোন প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না। কোথাও কোন সমস্যা তৈরী হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন, প্রয়োজনে নিকটস্থ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব যেমন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের পূণ্যস্নান, জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর আয়োজন সীমিত আকারে পালিত হওয়ায় হিন্দুদের সর্ব বৃহত ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজন নিয়ে এই মত বিনিময় সভায় পুরো জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে তারা আলোচনায় অংশ নেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া ২৬টি নির্দেশনা পাঠ করে সকলকে শোনান মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সেক্টর কমান্ডার ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সি আর দত্তসহ করোনা ভাইরাসে নিহত সকলের আত্মার শান্তি কামনায় এবং অসুস্থ্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা সভাপতি কমান্ডার গোপীনাথ দাশ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপক কুমার সাহার সুস্থ্যতা কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
নারায়নগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় মতবিনিময়