নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় শিশু সৌরভ (৭)’র মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ও হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ।
নিহতের সৎ ভাই সানি, ভাবি আয়েশা আক্তার ও ভাইয়ের শাশুড়ি শিল্পী বেগম মিলে পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশে শিল্পী বেগমের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। রাতের আঁধারে বাড়ির পাশে কচু ক্ষেতের ঝোপে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। পর দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কুড়িপাড়া এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় সৎ ভাই, ভাবি ও ভাইয়ের শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মৃত মনোয়ার হোসেনের ছেলে ও নিহতের সৎ ভাই সানি (১৯), তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার (১৮) ও তার শাশুড়ি শিল্পী বেগম (৩৫)। তারা সবাই বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া বটতলা এলাকার রাজা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা এ তথ্য জানান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বন্দরের কুড়িপাড়া এলাকা থেকে শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তদন্তে নামে পুলিশ। এ ছাড়া পরিবার সদস্যদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হচ্ছিল। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে নিহতের সৎ ভাই সানিসহ তার শ্বশুরবাড়ির চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সানি, তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার ও শিল্পী বেগম হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরে শুক্রবার সকালে নিহতের বাবা সালাউদ্দিন বাদী হয়ে বন্দর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় তাদের তিন জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।’
নিখোঁজের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে শিশু সৌরভ নিখোঁজ হয়। তার বাবা সালাউদ্দিন মিয়া অটোরিকশা চালক। তার মা কুলসুম বেগম ঝুট বাছাইয়ের কাজ করেন। তিনি দুপুরে বাড়ি ফিরে শিশু সৌরভকে খোঁজাখুঁজি করে পাননি। এ বিষয়ে সে তার বড় ছেলে সানি ও ছেলের বউ আয়েশা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন। ওই সময় তারা এসব বিষয় জানে না বলে এড়িয়ে যায়। পরে কুলসুম বেগম বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করলেও থানায় জিডি করেননি।’ ‘দুদিন পর বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশ থেকে দুর্গন্ধ এলে এর খোঁজ করতে গিয়ে ঝোপের মধ্যে লাশের সন্ধান মেলে। লাশ উদ্ধারের পরে তার সৎ ভাই সানি, ভাবি আয়েশা আক্তার ও সানির শাশুড়ি শিল্পী বেগমকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা খুনের বিষয়টি স্বীকার করে। কারণ উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, সাত মাস আগে সানি প্রেম করে আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা (সানি ও তার স্ত্রী এবং সৎ ভাই সৌরভ ও তার পরিবারের সদস্য) একই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। শিশু সৌরভ দিনে রাতে বিভিন্ন সময় ভাই ও ভাবিকে বিরক্ত করতো ও তাদের সাথে দুষ্টামি করতো। এ কারণে তারা বিরক্ত ছিল। এই বিরক্তের বিষয়টি তারা শাশুড়িকে জানায়। তখন শাশুড়ি তাদের বলে, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে তো তোমরা সংসার করতো পারবে না’’। ফলে তারা সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সৌরভ তার মায়ের সঙ্গে কর্মস্থলে দেখা করে বাড়িতে চলে আসে। এ সময় বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে ছিল। এই সুযোগে ফাঁকা পেয়ে সৎ ভাই সানি সৌরভকে শাশুড়ি শিল্পী বেগমের ঘরে ডেকে নেয়। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে সেখানে শিল্পী বেগম তার ঘরে সৌরভকে গলা চেপে ধরে ও সানি পা চেপে ধরে। এ সময় ঘরের বাইরে পাহারা দেয় আয়েশা। পরে শাশুড়ির ঘরের খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখে। ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টার দিকে বাড়ির অদূরে কচু ক্ষেতে (ঝোপে) লাশটি ফেলে দেয়। পরের দিন দুপুরে দুর্গন্ধ পেয়ে লাশের সন্ধান মেলে।’#