স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, যেহেতু করোনা সংক্রমনের সময় চলছে তাই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই পূজা উদযাপন করতে হবে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপে প্রবেশের রাস্তা প্রসস্ত রাখতে হবে। সেই সাথে মেডিকেল টিম রাখা হবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রস্তুত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুতের ঘাটতি হলে বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শারদীয় দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন পাল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম সাহা, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, জেলা কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক রিপন ভাওয়াল, ফতুল্লা থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রঞ্জিত মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক শিবু দাস, সোনারগাঁও কমিটির সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ভৌমিক, বন্দর কমিটির সভাপতি শংকর কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মণ, আড়াইহাজার কমিটির সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, পূজা পরিষদ নেতা তপন ঘোপ সাধু, রিপন দাস, আনন্দ সেরাইগী সুমন, ভজন দাসসহ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় মো. জসিম উদ্দিন আরো বলেন, করোনাকালিন সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক ধৈর্য সহিঞ্চুতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের কারণে আমাদেরকে প্রশংসা করা হয়েছে। প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চাল দেয়া হবে আপনারা সংগ্রহণ করে নিবেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি আপনাদের সহযোগিতা না করে তাহলে জানাবেন। এবার নারায়নগঞ্জে ১৯৬ টি পূজা মন্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজার সার্বিক দিক তুলে ধরে বলেন, এবার পূজা হবে, উৎসব হবে না। শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জের মন্ডপগুলোতে যে সকল সমস্যা রয়েছে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এবারের পূজায় সকলকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্যে সকলে সচেতন থাকতে হবে এবং অতিরিক্ত জনসমাগম পরিহার করতে হবে। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবারের দূর্গা পূজা পালনের বিষয়ে ২৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে সকলে দূর্গা পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অনেক মন্দির কতৃপক্ষ শংকায় ছিলেন এবারে পূজা অনুষ্ঠিত হবে কিনা। আমাদের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে আলোচনা করে পূজা আয়োজনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তবে সেই সাথে ২৬টি নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমাদের সকলকে সে নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মন্ডপগুলোতে বাদ্য বাজনার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, কোন প্রকার অতিরিক্ত লাইটিং থাকবে না। প্রতিটি মন্ডপে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধুমাত্র ধর্মীয় অচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজা পালন করতে হবে। প্রতিমার আয়তন যাতে কোনভাবেই তিন ফুটের বেশী না হয় যাতে করে ৫জনে মিলে উঠিয়ে নেয়া যায়। প্রতিটি মন্ডপে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে আর সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কোন প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না। কোথাও কোন সমস্যা তৈরী হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন, প্রয়োজনে নিকটস্থ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উৎসব যেমন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের পূণ্যস্নান, জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর আয়োজন সীমিত আকারে পালিত হওয়ায় হিন্দুদের সর্ব বৃহত ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দূর্গা পূজা আয়োজন নিয়ে যারা শংকিত ছিলেন তাদের সেই শংকা দুর হয়েছে। তবে অবশ্যই সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই সন্ধ্যার আলো থাকতে থাকতেই বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সদস্যদের সুস্থ্যতা কামনায় সকলের আশির্বাদ প্রার্থনা করেন নেতৃবৃন্দ।