নারায়ণগঞ্জের কন্ঠ:
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহা’র ৩২তম মৃত্যু বার্ষিকীর দোয়া ও মিলাদে জনসাধারণের ঢল নেমেছে। বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারী বাদ আসর বন্দর উপজেলার মুছাপুর ত্রিবেনী এলাকায় অবস্থিত শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে উক্ত দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়। দোয়ায় প্রায় ৫ সহ¯্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহা ও প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা সহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের এর উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত দোয়া অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহন করেন।
দোয়া পূর্বক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা, ১১ দফা, ৬ দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ সহ স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতি মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহার অবদান ও ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা এবং পরবর্তীতে দলকে সুসংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।
দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।
দোয়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, যুগ্ম আহবায়ক রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, ১৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি পলি বেগম, জেলা শ্রমিক পার্টির আহবায়ক আবুল খায়ের ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহম্মেদ সাগর, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল, বন্দর থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান কমল, সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মঈন উদ্দিন আহম্মেদ সহ সকল ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মরহুম একেএম সামসুজ্জোহা ছিলেন ভাষা সৈনিক স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত(মরনোত্তর) ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনি মহান ভাষা আন্দোলন, ১১ দফা, ৬ দফা, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক। তিনি ১৯৭০ সালে গণপরিষদ ও ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় লগ্নে ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর জাতির জনকের পরিবারকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ) বন্দী দশা থেকে মুক্ত করতে গিয়ে ঢাকায় হানাদার বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘বায়তুল আমান’-এ জন্ম হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনে তাঁর পরিবারে ৫ জন সদস্য এক সাথে কারাবন্দী হয়ে ছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তিনি আদমজী জুট মিলসহ চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্,আর্দশ কটন মিল লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস, লতিফ বাওয়ানী কটন মিলস, ঢাকা কটন মিলস পুন:র্গঠন করে ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার পর তিনি খুনি চক্রের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, মরহুম এ.কে.এম শামসুজ্জোহার সহধর্মিনী মরহুম নাগিনা জোহা ছিলেন ভাষা সৈনিক। তিনি রতœগর্ভা মা পুরস্কারে ভূষিত হয়ে ছিলেন। তাঁর ৩ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে প্রয়াত নাসিম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ৪বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মেঝ ছেলে সেলিম ওসমান একই আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ছোট ছেলে শামীম ওসমান নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে তৃতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।